আশরাফুল আলম, ডুমুরিয়া : খুলনার বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়ার খড়িয়া, মাধবকাটি বিলের কয়েক হাজার চিংড়ি
ঘের কয়েক মাস আগে বর্ষার পানিতে তোলিয়ে যাওয়ায় চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন।আসন্ন বোরো মৌসুমে ধান চাষের জমি জেগে না ওঠায় ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
খুলনা-যশোর জেলার ডুমুরিয়া-ফুলতলা-অভয়নগর-কেশবপুর-মনিরামপুর উপজেলার ২ লক্ষাধিক একর আয়াতনের দেশ-খ্যাত বিল ডাকাতিয়া ১৯৯০ সালের পর থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
তখন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মৃত গাজী আবদুল হাদী ও কৃষক সংগ্রাম সমিতি নেতা সুলতান মল্লিকথর যৌথ-নেতৃত্বে ভুক্তভোগী কৃষক ও অসহায় মানুষের ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দৌলতপর- চুকনগর সড়কের সুন্দার খাল, আমভিটা ও খান সবুর’র দিঘি কেঁটে দিলে বিল থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়।
তারপর পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কেজেডিআরপিথ প্রকল্প হাতে নিয়ে শলুয়া স্লুইচ গেটের মুখ থেকে কৈয়া পর্যন্ত নদী ও কয়েকটি খাল খনন, শোলমারি নদীর মুখে বাধ দিয়ে ১০ ভেন্টের স্লুইজ গেট তৈরি-সহ
কয়েকটি কালভার্টও নির্মান করে। আর সে কারণে বিগত ২২-২৩ বছর ধরে বিল ডাকাতিয়া এলাকার মানুষ জেগে যাওয়া বিলে খন্ড খন্ড জমিতে নিজের মতো করে ভেড়ি-বাধ দিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি বোরো মৌসুমে ধান ও ভেড়িতে নানা প্রকার সবজি চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে বেশ আনন্দেই জীবন-যাপন করছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শোলমারী নদীতে পলি জমে জমে অনেকাংশে ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গেটের ভেতরে কৈয়াথর সংযোগ নদীতেও পলি জমে ভরাট হওয়ায় বিল ডাকাতিয়ার তলদেশ অনেক নিচু হওয়ায় ধীরে ধীরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে। আর গত কয়েক মাসের অতি বর্ষণে সমগ্র বিলের চিংড়ি ঘেরগুলো তোলিয়ে মাছ বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভেড়ির সকল সবজি নষ্ট হয়ে চাষিরা চরম ক্ষতির শিকার হন।
আর তখন থেকেই ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ভুক্তভোগি জনগণ পানি নিষ্কাশনের আশায় সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাস জুড়ে প্রতিদিন শ শ কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে পলি অপসারণ’র কাজ করেছেন। তবুও এ বছর বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে ঘেরের মধ্যে এখনও ৩-৪ ফুট পানি থাকায় আর এক মাসের মধ্যে ধান রোপণের কোনো সম্ভবনা নেই।
এলকার চাষীরা বলেন, এক দেড় মাসে ১-২ ফুট পানি কমায় শুধু ঘেরের ভেড়ি বাধটিই দেখা যাচ্ছে। তবে ঘেরের মধ্যে ১-৪ ফুট পানি রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, বিলডাকাতিয়া ডুমুরিয়া উপজেলার আওতায যে অংশ জলাবদ্ধ রয়েছে তা দিনে দিনে কমে আসছে। আশাকরি বোরো আবাদে বেশী একটা সমস্যা হবে না।
উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি, শেখ সেলিম আকতার স্বপন বলেন, বিলডাকাতিয়ার তলদেশ থেকে নদী উঁচু হওয়া নদীর পলি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পলি অপসারণের দাবীতে পানি সম্পদ মন্ত্রীর কাছে উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন করা হয়েছে।
উপজেলার চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ বলেন, এ মৌসুমে ধান চাষ করতে হলে, উচ্চ ক্ষমতাধর পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ রহমান তাজকিয়া বলেন, উচ্চ ক্ষমতার পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য উচ্চ পর্যায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আশু পানি সরানোর ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। স্থায়ী ভাবে কিছু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
[…] […]