মুমিনুর রহমান : বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৩ সাল। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর ২০২৪। বিদায়ী বছরে অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মাঝে কিছু হারানোর বেদনা, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিষাদের অন্ধকার নামিয়েছে। কেউ রোগে ভুগে মারা যান, আবার কেউ আত্মহত্যায় নিজেকে দিয়েছেন বিসর্জন। সড়ক দুর্ঘটনার মতো অস্বাভাবিক মৃত্যুতে কারও অকাল প্রয়াণ ঘটে।
বছরের শুরুতে ২৮ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের নবীনবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিক্তা খানম ওরফে নোভার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভালকি গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে তিনি।
এ ঘটনায় তার স্বামী ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মণ্ডলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাসেল মন্ডল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোচিং করানোর জন্য বাসা থেকে বের হন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তিনি গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান, কক্ষের দরজা খোলা। এসময় তিনি ভেতরে ঢুকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া স্ত্রী রিক্তার মরদেহ দেখতে পান।
পরের মাসে মার্চের ১৯ তারিখ কৃষি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী আফসানা মিমি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে কয়েকজন বাস যাত্রীসহ আফসানা মিমির মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বাসে চড়ে মিমি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন।
এর প্রায় তিন মাস পর জুলাই এর ১২ তারিখে আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনুপম শিকদার আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলাধীন নিজ গ্রাম রাজাপুরে দুপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অনুপ শিকদারের চাচাতো ভাই সুজয়। আত্মহত্যার আগে অনুপমের স্ত্রী বাসা থেকে বাপের বাড়ি চলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, পারিবারিক কলহে এমন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এছাড়া, পহেলা আগস্টে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী হিয়া ও রিতু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে ডুবে মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টিতে ভেজার সময় পা পিছলে লেকের পানিতে ডুবে যায় হিয়া। হিয়াকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন রিতু৷ এসময় দুজনই লেকের পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাদেরকে লেক থেকে তোলার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯ আগস্ট রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আসহাব আলী ফুসফুসে ইনফেকশন ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
জানা যায়, আসহাব দীর্ঘদিন ফুসফুসের ইনফেকশন, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে তার ফুসফুসের ফাঙ্গাস ধরা পরে। অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ১২ আগস্ট তাকে ঢাকায় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মো.আক্কাস আলীর ছেলে।
সর্বশেষ, গত ৮ ডিসেম্বর এ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এসিসিই) বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুমি সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা যান। গেল ৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) খুলনা শহরে মাহিন্দ্র ও ভ্যানের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরেরদিন শুক্রবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
খুলনা সদরে একটি ভাড়া বাসায় সপরিবারে থাকতেন সুমাইয়া সুমি। তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার শেখ শাহাবুদ্দিনের মেয়ে।
[…] […]