মোংলা প্রতিনিধি : মোংলায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণে এক কলেজ পড়–য়া কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
এঘটনায় ধর্ষক অশিত কুমার বিশ্বাসকে আটক করে বাগেরহাট জেলা হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে আটক করে বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। আটক অশিত মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার বিভাগে কর্মরত। সে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর উপজেলার পুরনন্দনপুর এলাকার রামপদ বিশ্বাসের ছেলে।
মোংলা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে অনার্সে পড়া লেখা করা কালিন সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় আসামী অশিত কুমারের সাথে। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে প্রমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রমের সম্পর্কের সুত্র ধরে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমনও করেছে তারা। এভাবে তাদের উভয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক চলতে থাকে।
ওই কিশোরীর লেখা পড়ার চলাকালীন ২০১৭ সালে মাগুরায় একটি এনজিওর চাকুরীতে যোগদান করে সে। আসামী ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার নিকট থেকে ধাপে ধাপে প্রায় লক্ষাধিক টাকা নিয়েও আতœসাত করেছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্ত ২০১৭ সাল থেকে আসামী অশিত বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বামী স্ত্রীর মতন তার সাথে শারীরিক মেলামেশা অব্যাহত রাখে। আসামীর শারীরিক সম্পর্কের ফলে ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রথম বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। কিন্তু আসামী তার বেকারত্বকে পুজি করে বিভিন্ন প্রলোভন ও তার পারিবারিক সমস্যার কথা বলে ওই কিশোরীর গর্ভে থাকা ৬ মাসের বাচ্চা নষ্ট করতে জোর পূর্বক বাধ্য করে।
এরপর থেকে বিয়ের জন্য বার বার অনুরোধ ও আকুতি মিনতি করলে সে একটি চাকুরী পাওয়ার পর বিয়ে করবে এবং সেই পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে আশ্বাস্ত করে বলেও জানায় ওই কিশোরী। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে হারবার বিভাগের আসামী অসিত কুমার বিশ্বাস’র চাকুরী হয় এবং গত বছরের ১৭ নভেম্বর আসামী ওই কিশোরীকে নিয়ে খুলনা সুগন্ধা নামের একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় রাত্রী যাপন করে এবং সেখানেই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে বলে মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে।
আসামী অশিত কুমার বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার বিভাগের দপ্তরে কর্মরত রয়েছে। চাকুরী হওয়ার পরেও বিয়ে করার জন্য বার বার অনুরোধ করলে আসামী বিয়ে না করে তার সাথে তাল-বাহানা শুরু করে এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
পরে বিয়ে জন্য চাপ সৃষ্টি করলে কিশোরীর সাথে উশৃংঙ্খল আচরন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি সহ তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলেও মামলার উল্লেখ করে সে। এছাড়া ওই কিশোরীর বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা লোকদের দিয়া ভয়ভীতিও দেয়া হয়। বর্তমানে আসামী অন্যত্র বিয়ে কার জন্য পায়তারা করছিলো।
ভুক্তভোগী কলোজ পড়ুয়া ওই কিশোরী জানায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুলনা সুগন্ধা নামের একটি আবাসিক হোটেলে ওই কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পুর্বক ধর্ষন করে অশিত। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারী ও ১৬ মার্চ দুই দফায় মোংলার সিঙ্গাপুর হোটেলে এনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৭ ও ১০ নম্বর কক্ষে পুনরায় তাকে ধর্ষন করে। এতে ওই কিশোরী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে।
আসামী অশিত আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়া দিনের পর দিন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক মেলামেশা করা সহ আমার নিকট থেকে নগদ অর্থ নেওয়ায় আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। কোন উপায় না পেয়ে আসামীর হাতে-পায়ে ধরে আমার অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে বিয়ে করার জন্য কাকুতি-মিনতি করলে আসামী অসিত কুমার বিশ্বাস আমাকে হয়রানী করে আসছিল।
আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ স্ত্রী রুপে ব্যবহার ও ধর্ষন করে আসছিল। আমি কোন উপায় না পেয়ে আইনের সহায়তা নিতে বাধ্য হই বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আসামী ও তার লোকজনের হুমকির ভয়ে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতেছি।
এ ঘটনায় দুই পরিবারের মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে, কিন্ত কোন সমোজতা না হওয়ায় ১৩ মে কিশোরী বাদি হয়ে মোংলা থানায় মামলা করে।
এ মামলায় আসামী অশিত কুমার বিশ্বাসকে মঙ্গলবার রাতে আটক করে বুধবার দুপুরে তাকে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, কলেজ পড়–য়া এক কলেজ ছাত্রীর সাথে অশিত নামের এক যুবকের সাথে পরিচয়, পরে প্রমের সম্পর্ক।
এতে কয়েক দফায় ধর্ষনের ঘটনাও ঘটেছে বলে ওই কিশেরাী মামলায় উল্লেখ করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামী অশিতকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
[…] […]