নিজস্ব প্রতিবেদক : পরোপকারী ও অদম্য সাহসী একজন নারী রূপসা আনসার ভিডিপির প্লাটুন কমান্ডার জেসমিন আক্তার। কারো বিপদের কথা কানে আসলেই ছুটে যান সেখানে। নিজের শক্তি-সামর্থ দিয়ে চেষ্টা করেন উপকারের। কখনও অসুস্থ ব্যাক্তিকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে, কখনও প্রসাব বেদনায় কাতর প্রসূতি মায়ের সেবায় সরব থাকেন তিনি।
তাছাড়া বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধি, ভিজিডি, ভিজিএফের আওতাভূক্ত হতদরিদ্রদের সুফল পাইয়ে দিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ছুটে বেড়ান। কর্মস্থলে সহপাঠীদের মাঝেও রয়েছে সাহসীকতার অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাইল ফলক।
গত কয়েক দিন পুর্বে জেসমিন আক্তার একটি টিনের ঘর আঠারো বাকী নদীতে ভাষমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে ঘরটি উদ্ধার করে নৌপুলিশের মাধ্যমে ঘরের প্রকৃত মালিককে ফেরত দিয়ে সমাজ ও পরিবার গঠনে অনন্য অবদান রেখেছেন। এসব নানা কারণে অসহায় মানুষের ভরসাস্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে জেসমিন আক্তার আঠারোবাকী নদীতে একটি টিনের ঘর দেখতে পেয়ে নৌপুলিশকে সংবাদ দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় নদী থেকে ঘরটি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে নৌপুলিশ এসে ঘরটি জেসমিন আক্তারের জিম্মায় রেখে যায়। সেই থেকে পরোপকারী জেসমিন আক্তার ঘরের প্রকৃত মালিককে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে জেসমিন জানতে পারেন গত ২৬ সেপ্টেম্বর তেরখাদা থানায় ঘর হারানো মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জেসমিন ছুটে যান তেরখাদা থানায়। সংগ্রহ করেন ঘরের মালিকের নাম-ঠিকানা। এরপর নৌপুলিশের মধ্যস্থতায় সাইফুলকে ঘরটি ফিরিয়ে দিয়ে হাসি ফুটান সাইফুল ও তার পরিবারের মুখে। অপরদিকে খেলাধুলায় ও পিছিয়ে নেই জেসমিন। সম্প্রতি রূপান্তর কর্তৃক আযোজিত বাগেরহাট জেলা অপরাজিতা নারী একাদশ বনাম খুলনা জেলা অপরাজিতা নারী একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। তুমুল প্রতিযোগীতা পূর্ণ খেলায় জয় সুচক গোলটি করেন জেসমিন। ফলে উপজেলা আনসার ভিডিপি বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার জেসমিন আক্তারকে ম্যান অফদা ম্যাচে ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। জেসমিন আক্তারকে ম্যান অফদা ম্যাচের পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি খুলনা কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন। এছাড়া জেসমিন রূপসা নদীতে ট্রলার যোগে পার হওয়ার সময় ট্রালারের ইঞ্চিলের সংগে পেছিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী বয়স্ক মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর বৃদ্ধার বাড়ি তাকে পৌছে দিয়ে আলোচনায় আসেন। একারণে জেসমিন ২০২১ সালে উপজেলা পর্যায়ে জয়ীতা নারী হিসেবে বেগম রোকেয়া এওয়ার্ড প্রাপ্ত হন। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ভোট ডাকাতিকালে জেসমিন জীবনবাজী রেখে ভোট কেন্দ্র রক্ষাসহ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
জেসমিন আক্তার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের সম্ভ্রান্ত লস্কর পরিবারে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আঃ সাত্তার লস্কর এবং মাতার নাম আরোজা বেগম। তিনি ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ আনসার বাহিনির সদস্য হিসেবে যোগদান করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সেবা করে চলেছেন।
Leave a Reply