সকাল ডেস্ক : নিরিবিলি একটি জায়গা নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে পড়া, কয়েকবার গভীরভাবে দম নেয়া ও ছাড়ার মাধ্যমে মনকে স্থির করে মনের বাড়িতে প্রবেশ করানো। কল্পিত বাড়িতে বসে ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে সাফল্য আর প্রশান্তির অনুরণন নিয়ে ফিরে আসা এবং বাস্তবে তা প্রয়োগে লেগে থাকা। ব্যাস হয়ে গেল মেডিটেশন! জেনে না জেনে এমন প্রক্রিয়াতেই মেডিটেশন বা ধ্যান মানুষের জীবনে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
আর যথাযথ নিয়ম মেনে যখন ধ্যান করা হয়, তখন এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে দেহ-মনে তথা সামগ্রিক জীবনে। আত্মশক্তির বিকাশ, রোগ নিরাময়, সাফল্য কিংবা প্রশান্তি লাভে মেডিটেশনের গুরুত্ব এখন প্রমাণিত সত্য। তাইতো বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন।
দিন দিন ধ্যানের এমন বিস্তার লাভের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই ২১ মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। নিয়মিত অনুশীলন মানুষের ভেতরের ইতিবাচক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। নিয়মিত চর্চায় কমে যায় মনের রাগ ক্ষোভ দুঃখ হতাশা টেনশন স্ট্রেস কিংবা মানসিক চাপ। নেতিবাচকতা থেকে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় ইতিবাচকতায়। সমমর্মী হয়ে ওঠে মন। ফলে পারিবারিক পেশাগত সামাজিক সম্পর্কগুলো আরো সুন্দর হয়ে ওঠে। আর এমন প্রায়োগিক কার্যকারিতায় বিশ্বজুড়ে মেডিটেশন হয়ে উঠেছে নিরাময়ের বিকল্প পদ্ধতি, সাফল্যের অব্যর্থ প্রক্রিয়া ও প্রশান্তির লাগসই টেকনিক হিসেবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও লাখ লাখ মানুষ মেডিটেশন করে নিজেদের জীবন-যাপনকে অর্থবহ করে তুলছেন।
হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিলতা, লিভার সিরোসিসসহ আরও নানা রোগের মূলে রয়েছে টেনশন বা স্ট্রেস। স্ট্রেস মুক্তির জন্যে মেডিটেশন এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। স্ট্রেস মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের শত শত হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রতিরোধমূলক যতœ হিসেবে রোগীদের যোগ-মেডিটেশন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বোস্টনের মাইন্ড বডি মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. হার্বার্ট বেনসন তার ‘ব্রেকআউট প্রিন্সিপাল’ নামের বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মনকে শিথিল করার মাধ্যমে কীভাবে একজন মানুষ তার মানসিক সামর্থ্যকে তুঙ্গ অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
আমাদের দেশে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস পালনের মূল উদ্যোক্তা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবছর ২১ মে মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে দিনটি। ওই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সকাল ৬টা থেকে ৭টা থাকছে বিশেষ আয়োজন। যেখানে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গৃহিণীসহ নানা বয়সী নানা পেশার মানুষ। দিবস উপলক্ষে শিশুতোষ ছড়া ও গল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে কোয়ান্টাম থেকে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ বুলেটিন। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে একই সঙ্গে সকাল ৬টায় এবং দেশের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ধ্যানমগ্ন হবেন দিবসটিতে।
‘ভালো মানুষ ভালো দেশ স্বর্গভূমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে দিবসটি। ভালো ভাবনা, ভালো বলা, ভালো করা আর ভালো থাকার প্রত্যয়ে দেশকে স্বর্গভূমি বানাতে সর্বসাধারণের মধ্যে মেডিটেশনকে ছড়িয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবি। প্রত্যাশা করা যায়, নিয়মিত চর্চার মধ্যদিয়ে একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে মেডিটেশন। আর নিয়মিত চর্চায় সমমর্মিতা নিয়ে এ দেশ রূপান্তরিত হবে সুস্থ সবল কর্মদ্যোমী সুশৃঙ্খল মানবিক এক মহাসমাজে।
[…] […]