কয়রা প্রতিনিধি : আত্মঘাতি স্যালো ড্রেজার মেশিন দিয়ে উপকূলীয় কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ ও সুন্দরবন অভ্যন্তরের নদী থেকে বালু উত্তোলন করে চলছে রমরমা ব্যবসা। এসব বালু অন্যাত্রে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সরবরাহও করছেন তারা। এতে নদী তীরবর্তী বাঁধ ও সুন্দরবনে ভাঙ্গনের ঝুঁকি বাড়ছে।
এছাড়া সড়ক নির্মাণ কাজে বালু সরবরাহ করতে এলাকার ফসলি জমি ও খাল থেকেও তোলা হচ্ছে বালু। ফসলি জমিতে পানি না থাকলেও বাইরের খাল থেকে পানি এনে গর্ত করে সেখানে আত্মঘাতি ড্রেজার লাগিয়ে তোলা হচ্ছে এই বালি। প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে এমন কর্মযজ্ঞ চললেও বন্ধের কোন উদ্যোগ নেই।
সরেজমিনে হরিহরপুর এলাকায় দেখা যায় ড্রেজার দিয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর মাঝ থেকে বালু তুলছেন শ্রমিকরা। এর একটু দুরে সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ি। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দুরে বীণাপানি এলাকায় বার্জ থেকে পাইপের মাধ্যমে বাঁধের ঢালে বালু ফেলছিলেন শ্রমিকরা।
তারা জানিয়েছেন, রাতের বেলা পার্শ^বর্তী সুন্দরবনের খাসিটানা এলাকার নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হয়েছে। এছাড়া চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষ নদ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে পাশ^বর্র্তী বাঁধের কাজে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাঁধের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে ড্রেজার মালিকদের বালু না তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সেখানকার দায়িত্বরত পাউবোর উপসহকারি প্রকৌশলী বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বনবিভাগের খাসিটানা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, রোজার সময় কয়েকজন ড্রেজার মালিক বালু তুলছিলেন। তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য ফসলি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে দিন-রাত বালু তোলা হচ্ছে।
বালু তোলার কাজে নিয়োজিত ড্রেজার মালিকরা জানিয়েছেন তারা স্থানীয় তরিকুল ও ফিরোজ নামের দুই ব্যক্তির হয়ে কাজ করছেন। এ কাজের জন্য প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে প্রতি ফুট বালুর জন্য ৫০ পয়সা হারে কেটে রাখা হচ্ছে। এই তরিকুল ইসলামের ২ থেকে ৩ টা ড্রেজার বিভিন্ন জায়গায় সার্বক্ষনিক বালু তুলছে।
ইয়াসিন মোল্লা নামে একজন ড্রেজার মালিক জানিয়েছেন, তরিকুল ও ফিরোজ নামে দুই ব্যক্তি চারটি ড্রেজার ভাড়া করেছেন। তাদেরকে প্রতি ফুট বালু তোলার জন্য ৪ টাকা করে দেওয়া হয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে এর থেকে ফুট প্রতি ৫০ পয়সা করে কেটে রাখা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গ্রাম্য ডাক্তার লিয়াকাত হোসেন জানান, প্রথমে সড়কের পাশের খাল থেকে বালু তোলা হয়। এতে খালের দুই পাশে ধসে যাওয়ায় গ্রামবাসির আপত্তির মুখে বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে স্থানীয়দের ফসলি জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে। অপর বাসিন্দা ওসমান গনি বলেন, এভাবে ফসলি জমি থেকে গর্ত করে বালি তুললে জমিতে ফসল কম হবে এবং বাড়িঘর ক্ষতি হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ছে।
বালু তোলার দায়িত্বে থাকা তরিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে বলেন, আমরা সকলের সাথে কথা বলে বালি তুলছি। কাজ শেষ হওয়ার আগে সকলের সাথে দেখা করব। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিক উজ জামান বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসছিল বালি তোলার খবর পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। যদি আবার চলে তাহলে তখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[…] সভাপতির ছাতা পেয়ে নৌকার মাঝিরা খুশি কয়রায় ফসলি জমি ও ভাঙ্গন কবলিত নদী থেকে… তেরখাদায় হাইব্রীড হীরা ধানের মেঘা […]