আশরাফুল আলম : ডুমুরিয়ায় বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিস্টিটিউট উদ্ভাবিত ‘ডায়াবেটিক রাইস’র বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও ধান চাষি মাধ্যমে জানাযায়, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিস্টিটিউটে বিগত ৬ বছরের অধিক সময় ধরে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২ মার্চ, বোরো মৌসুমের জন্য উচ্চ-ফলনশীল স্বল্প গ্লাইসেমিক ইনডেক্স(জি.আই) বা ‘ডায়াবেটিক রাইস’ ব্রি-ধান ১০৫ সারাদেশে চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা বিলের আধুনিক কৃষক শেখ মনজুর রহমান সম্পূর্ণ নতুন জাতের এই ধান চাষের জন্য তার বীজতলায় ১০৫ জাতের ১০ কেজি ধান বপন করেন।
অন্যান্য বোরো ধান চাষের মতো সকল প্রকার সার দিয়ে তার ১ একর(১০০ শতাংশ) জমি প্রস্তুত করে গত ১৫ জানুয়ারি, ৩০ দিন বয়সি সেই ধান-পাতাগুলো রোপন করেন। ৩ মাসের মধ্যে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে সেই ক্ষেতে উচ্চ-ফলনশীল ১০৫ জাতের ধানের বাম্পার ফলন দেখতে আগ্রহী কৃষক ও কৃষিবিদরা জড় হচ্ছেন।
সোমবার বিকালে ওই ধানক্ষেতে গেলে অত্যন্ত আনন্দচিত্তে কৃষক শেখ মনজুর রহমান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিনের পরামর্শে ও তাদের দেওয়া সকল প্রকার সার-বীজ নিয়ে আমি প্রথম বারের মতো ব্রি ১০৫ জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছি। অন্যান্য জাতের বোরো ধানের মতোই চাষাবাদ করেছি।
তবে এ ধানে ১ বার পানির সেচ বেশি দিতে হয় এবং ১ সপ্তাহ পরে কাঁটতে হয়। তবে ঝড়েও এ ধান গাছ পড়ে না। তিনি সকলের সামনে একটা ধানের বাইল এনে তাতে ২০০টি ধানের দানা গুনে দেখিয়ে বলেন, অন্যান্য বোরো ধানের বাইলে সাধারণত ১৫০টি দানা হয়, অর্থাৎ এই ধানের ফলনও বেশি। ওই সময় উপস্থিত পার্শবর্তী শোভনা গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ডায়াবেটিক ধানের ফলন যেহেতু ভালো দেখছি, তাই আগামিতে আমরাও এই ধান চাষ করবো।
‘ডায়াবেটিক রাইস’ বা ব্রি-ধান ১০৫’র বৈশিষ্ট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিস্টিটিউট থেকে বলা হয়েছে, এই ধানের গুনগত মান ভালো, চালের আকৃতি মাঝারি চিকন। এর জিআই’র মান ৫৫ হওয়ায়, এটাকে লো-জিআই রাইস বা ডায়াবেটিক রাইস বলা যায়। অন্যান্য জাতের তুলনায় এর ফলনও বেশি। ১ থেকে ২০ অগ্রহায়নের মধ্যে পাতা ফেলা ও তার ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে রোপন করতে হবে। এর জীবনকাল ১৪৮দিন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় ডায়াবেটিক রাইস’এ গ্লুকোজ(মিষ্টি)’র পরিমান খানিকটা কম বলে এর ভাতে ডায়াবেটিক রোগ বিস্তার বা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চেষ্টায় প্রথমবার ডুমুরিয়ায় চাষ করেই খুব ভালো ফলন হয়েছে। আগামিতে এই ক্ষেতের ধানই বীজ তৈরি করে চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আশা করছি, ডুমুরিয়া এলাকার কৃষকরা মনজুরের সাফল্য দেখে ব্রি-১০৫ ধান চাষে এগিয়ে আসলে তাদের ও দেশের উপকার হবে।
Leave a Reply