নিজস্ব প্রতিবেদক : হেমন্তের সূচনালগ্নে, ভৈরব নদের তীরবর্তী সরকারী মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের প্রথম রিইউনিয়নে কলেজ প্রাঙ্গন প্রবীন-নবীনদের পদভারে মুখরিত হয়। সকাল থেকে আসতে শুরু করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আসেন ১৯৬৫ সালের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের শিক্ষার্থীরা। নবীন-প্রবীনের এ মিলনমেলায় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়। ১৯৬৫ সালে সিটি নাইট কলেজ হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু।
সিটি কলেজ রিইউনিয়নের সূচনাঃ
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ভোর থেকেই খুলনা সিটি কলেজ প্রাঙ্গনে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে মিলিত হয়। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে কলেজের ৫৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম রিইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ।
খুলনার মেয়র ও এ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র তালুকদার আব্দুল খালেক সূচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ বদিউজ্জামান, উপাধ্যক্ষ মোঃ মনিরুল ইসলাম সরদার, উদযাপন কমিটির আহবায়ক শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য সচিব তসলিম আহমেদ আশা, সাবেক জিএস তারিক মাহমুদ তারা, সাবেক ভিপি ফায়েজুল ইসলাম টিটো, কেসিসির কমিশনার জেড এ মাহমুদ ডন উপস্থিত ছিলেন। এরপর ৫৮ বছর পূর্তির ফলক উন্মোচন ও কেক কাটা হয়। পরে কলেজ অঙ্গন থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খুলনার আউটার স্টেডিয়ামে শেষ হয়।
বেলা ১১ টায় খুলনার আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের মূলপর্ব শুরু হয়।
মূলপর্বের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিইউনিয়ন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ মশিউর রহমান। প্রধান অতিথি বলেন, অর্থাভাবে কোন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেনা।
প্রতিবন্ধীদের বিদ্যাপিঠে পাঠাতে সহযোগীতা করুন। প্রত্যেকটি বিষয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন সম্ভবনা উদ্ভাবন ও একে অপরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহবান করেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেএইচ শিকদার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. তালুকদার লোকমান হাকিম, বাংলা সিমেন্টের এ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মঈনুল ইসলাম শিমুল।
বক্তৃতা করেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আফজালুর রহমান, ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মোশাররফ হোসেন শিকদার, সাবেক জিএস রবিউল ইসলাম রবি প্রমূখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, সাবেক ছাত্রনেতা তসলিম আহমেদ আশা, ফায়েজুল ইসলাম টিটো ও মঈনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রফেসর শিকদার মনিরুজ্জামান। তিনি খুঁজে পেয়েছেন সহপাঠী হারুণ অর রশিদ, মুজিবর রহমান ও আব্দুল লতিফকে। ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মোশাররফ হোসেন, সালাউদ্দিন সুকর্ণ, সাবেক জিএস শামীম আহমেদ, তারিক মাহমুদ তারা, সাবেক ভিপি ফায়েজুল ইসলাম টিটো প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে ২০০০ ও ১৯৯৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেশি দেখা যায়।
শেষ পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। এ অনুষ্ঠানে সাবেক ছাত্রনেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিন প্রজন্ম উপস্থিতিঃ
এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাবা, মেয়ে ও নাতী একত্রে উপস্থিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বাবা মোঃ আব্দুস সালাম ১৯৭৬ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। মেয়ে সাজিয়া পারভিন ২০০৪ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। নাতী মুন্সী জালালী আল আকরাম ২০২৩ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। হাতে হাত রেখে উপভোগ করেন এ অনুষ্ঠান।
একই পোষাকে ছয় বান্ধবীর আগমনঃ
একই রংয়ের শাড়ী পড়ে ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছয় বান্ধবী যোগদেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কলেজ আঙ্গিনায় তাদের পদচারণা। একত্রে ঘুরতে দেখা যায় তাদের।
এই ছয় বান্ধবী হচ্ছেন, মাহবুবু রহমান রুনা, পূজা সরকার, তানজিলা জাহান, ইভানা নাসরিন, শারমিন আক্তার মিমি ও মৌসূমী। মিমি পিটিআইতে ও মৌসুমী বিটিআরসিতে কর্মরত রয়েছেন আর অন্য চারজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। পাশ করার ২২ বছর পর তারা একত্রে জড়ো হন এ প্রতিষ্ঠানে।
আমেরিকা থেকে এসেছেন দু’জনঃ
আমেরিকার ডালাস থেকে এসেছেন সরদার খলিলুর রহমান। তিনি প্রাক্তন ছাত্র নেতা। এসে খুঁজে পেয়েছেন ১৯৮২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা আল মামুন ও কাজী শফিকুল ইসলামকে।
দীর্ঘদিন পর একই দেশের পেনসিল ভেনিয়া থেকে এসেছেন শাহানাজ পারভীন পাপড়ী। ১৯৯৩ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেন। ছিল তারমধ্যে প্রাণভরা আবেগ। তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রধান অফিস সহকারী আলতাফ হোসেনের মেয়ে।
Leave a Reply