মোংলা প্রতিনিধি : মোংলা দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর, অন্যান্য অঞ্চল থেকে দক্ষিনে এসে গাড়ী যোগে আসলেই মোংলা-রামপাল এলাকার দেখা মেলে। কাছাকাছির দূরত্বে রয়েছে সুন্দরবন, যার সৌন্দার্যের লীলাভুমি দেখতে যেন সকলকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশ-বিদেশী পর্যটকদের।
এ আসনে এবার উৎসব মুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে ৭জন প্রার্থী প্রতিদন্ধীতা করলেও নির্বাচনী মাঠে রয়েছে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। দুই প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর জুড়ে।
চায়ের দোকানে বসা এ এলাকার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব মাস্টার মজিবুর রহমান বললেন, প্রচার-প্রচারে দুজনই তো সমান সমান, কে জিতবেন, বলা যায় না তবে বিরোদী দল যার দিকে আসবে তারই বিজয়ের সম্ভাবনা।
বাগেরহাট-৩ (মোংলা ও রামপাল) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গত তিনবারের সংসদ সদস্য এবং বর্তমান পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি আওয়ামী লীগের বড় কোন পদ-পদবীতে না থাকলেও তার স্বামী খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আঃ খালেক।
পুর্বে সে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদায় ছিলেন। তাকে দিয়েই এ আসনে বেগম হাবিবুন নাহার পরিচিতি লাভ করেছেন। স্বামী খুলনা সিটিতে নির্বাচন করায় শুন্য স্থানটিতে পরিপুর্ন করেছেন তিনি।
তাঁর বিপরীতে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চারবারের সুন্দরবন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও দুইবারের মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারাদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মোংলা উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়ীত্বও পালন করেছিলেন বহুদিন।
স্থানীয় লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বেগম হাবিবুন নাহার ও ইদ্রিস আলী ইজারাদারে পাশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে সমানে সমান। বাগেরহাট জেলার বেশ কিছু নেতা, মোংলা-রামপাল উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির বেশ কিছু নেতাকর্মী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সহ ১০ ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা কাজ করছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলী পক্ষে।
আবার বেগম হাবিবুন নাহারের প্রচার প্রচারনাও চালাচ্ছেন দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, মোংলা ও রামপালের ৬ ইউপি চেয়াম্যান, মেম্বার ও দলীয় আ’লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে তারা দুজনেরই কর্মী সমর্থকরা বিএনপি বা অন্য দলের ভোটার-সমর্থকদের কাছে টানার এবং তাঁদের ভোটকেন্দ্রে আনতে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাগেরহাট-৩ আসনে মোট প্রার্থী ৭ জন। তবে এবারের নির্বাচনের প্রচারে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের বাইরে অন্যদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় পার্টি ও জাসদ প্রার্থীর কিছু পোস্টার দেখা যাচ্ছে।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে পৌর শহরে ও মিঠাখালী এলাকায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মোংলা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ ই¯্রাফিল হাওলাদার ও পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান জসিম বলেন, মূল দল আওয়ামী লীগের কেউ অন্য প্রার্থীর পক্ষে নাই, সামান্য কিছু নেতাকর্মী ঈগলের প্রচারে থাকলেও সময় হলেই নৌকা প্রার্থীর কাছে চলে আসবে আশা করছি।
জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীরাই নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। আর ঈগল প্রতিক প্রার্থী মাঠে আছেন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সামান্য কিছু নেতা-কর্মীদের নিয়ে।
দেশের উন্নয়ন দেখে অন্য দলের ভোটারেরাও মনে মনে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন বলে ধারনা। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদের নৌকায় আরোহণ করতে অনুরোধ করছি।
এদিন দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের গনসংযোগের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত বলেন ও রামপাল উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবু সাইদ বলেন, বেগম হাবিবুন নাহার ও তার স্বামী ৩৩ বছর রাজত্ব করেছেন। এদের শাসন ও শোষন থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বিকল্প হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলীর পক্ষে কাজ করছি।
তবে নৌকার বিরুদ্ধে নয়, ব্যাক্তি হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে। এ দুই উপজেলা অধিকাংশ দলীয় হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা ঈগল প্রতিকের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা যুগ যুগ ধরে এ দুশ্যাসন থেকে মুক্তি পেতে রাস্তায় নেমেছি। এছাড়া বর্তমানে যারা নৌকার মিছিল মিটিংয়ে কাজ করছেন, এরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে কাজ করছে কিন্ত এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী ঈগল প্রতিকের লোক রয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে ঈগল প্রতিককে বিজয়ী করে প্রমান করবে সাধারণ মানুষ কাকে চায়।
মোংলা-রামপালের অন্যান্য দলের লোকও রয়েছে, তারা নৌকা নয় ঈগল প্রতিক স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোট দিবেন। বিএনপির ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গে তারা বলেন,‘কে ধানের শীষ, কে নৌকার লোক, তা বিভেদ করি নাই। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। জনগণের প্রতি আন্তরিক ব্যক্তিকে জেতাতে বলছি।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বেগম হাবিবুন নাহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধ ইদ্রিস আলী ইজারাদার। এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে দ্বন্ধ বাড়তে থাকে। আর নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হতে থাকেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এ নির্বাচনের এখন একই দলের দুই জনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। আগামী দিনগুলোতে এ রেশ কোথায় গিয়ে দাড়ায় তা বলা মুশকিল।
এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ও বেগম হাবিবুন নাহার দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন পান বেগম হাবিবুন নাহার। তবে সরকারের নির্দশনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন ইদ্রিস আলী ইজারাদার।
মোংলা ও রামপাল উপজেলার এ আসনে ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মোঃ আশ্রাব উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানে দলটির ‘ভোটব্যাংক’ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, নৌকা ও ঈগল প্রতিকের প্রার্থী সহ তাদের লোকজন এখন বিএনপির ভোটারদের কাছে টানা এবং তাঁদের কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।
মোংলা পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান মানিক বলেন, দু’প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। তারা ক্ষমতায় আসতে আমাদের ভোটার ও সমর্থকদের বিভিন্ন কৌশলে টানার চেষ্টা করছেন। আমরা ভোট বর্জন করছি, যাঁরা প্রকৃত বিএনপি তারা কেউ ভোট দিতে যাবেন না। যদি বিএনপির পদ পদবীর কোন লোক ভোট দিতে যায় তবে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
প্রচার শুরুর পর থেকেই বাগেরহাট-৩ আসনে নৌকা ও ঈগল সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তারা দুজনই শক্তিশালী প্রার্থী। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই পক্ষ সংঘর্ষেও জড়িয়েছে কয়েক দফা। ফলে এ নির্বাচনে এখানকার মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি আশংঙ্কাও রয়েছে।
[…] টাউন মাগুরখালী-নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাগেরহাট-৩ : বিজয়ের লক্ষ্যে বিএনপিকে ক… বশেমুরবিপ্রবি: বিদায়ী বছরে হারিয়েছি […]