নিজস্ব প্রতিবেদক : রূপসায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়াম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দীন বাদশা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে এমপি আব্দুস সালাম মূর্শেদীর অনুসারীদের পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এই কোন্দলে প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
খুলনা-৪ আসনের সংষদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারী বেলা ১২ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ফ ম আব্দুস সালাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয়ী প্রার্থী আব্দুস সালাম মুূর্শিদীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন, রক্তাক্ত জখম ও তাদের সম্পদ ও ব্যবসার লুট ও দখলের যে কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়েছে তার কোন দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন বাদশা।
রূপসার আইচগাতী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভিন্ন ব্যক্তিকে পদায়নের যে বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে তা মিথ্যে, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। আব্দুস সালাম মূর্শিদী আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীর পদ পদবি প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন বক্তব্য আজও উপস্থাপন করেননি।
তবে যে সমস্ত পদধারী ব্যক্তি আওয়ামী লীগের আদর্শ শেখ হাসিনার ম্যান্ডেটের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছেন তাদের প্রতি দলের সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধুমায়িত ক্ষোভ যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলাফল আগামী দিনের নেতাকর্মীদের মনে ক্ষত চিহ্ন হিসেবে থেকে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ফ ম আব্দুস সালাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করা, দলীয় সভানেত্রী সিদ্ধান্তকে অমান্য করা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দলের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা , উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে প্রার্থী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন।
খুলনা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক হুইপ এস,এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই এস, এম মোর্তজা রশিদী দারা নির্বাচন করেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী বিজয়ী হন।
নির্বাচনের পর এমপি সালাম মুর্শেদী ১৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা আসেন এবং খুলনা-৪ আসনের রূপসা, তেরখাদা এবং দিঘলিয়া উপজেলা ব্যাপী বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি তার অনুসারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নের সভায় প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যে সমস্ত নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অশ্লীল ভাষায় হুমকি দিয়েছেন। তাদের পদ-পদবি খেয়ে ফেলার শুধু হুমকিই দেননি, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীরপক্ষের নেতাদের সালাম দিতেও জনগণকে নিষেধ করেছেন।
কামাল উদ্দিন বাদশা আরও বলেন, এমপি সালাম মুর্শেদী আইচগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন। এমপি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মীরজাফর, কুকুর ইত্যাদি বলে গালি দিয়েছেন।
তিনি রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান, রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বাদশাকে প্রকাশ্য সভায় রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমপির এ ধরনের বক্তব্য স্বাধীনতার মহান সৈনিকদের শুধু অপমানিত করেননি তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করেছেন।
মূলতঃ তার অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি স্বাধীনতার বিপক্ষের একজন মানুষ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককেও মীরজাফর বলতে পিছপা হননি।
কামাল উদ্দিন বাদশা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খুলনা-৪ আসনের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে এমপি সালাম মুর্শেদীর কার্যকলাপ পরিবর্তন করার দাবি জানান।
Leave a Reply