নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭২তম বন্দর দিবস ০১ ডিসেম্বর পালিত হয়েছে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বন্দর ভবনসহ মোংলা ও খুলনাস্থ বন্দর এলাকায় আলোকসজ্জা করা হয়। রাত ১২টা এক মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশী, বিদেশী সকল জাহাজে একযোগ হুইসেল বাজানো হয়। বন্দরের অগ্রগতি কামনা করে মোংলা বন্দরের সকল মসজিদে দোয়া মাহফিল করা হয়। সকাল ০৯টায় কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভ উদ্বোধন ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
এর পর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা কেক কেটে দিবসের শুভ উদযাপন শুরু করেন। শুরুতেই অত্র বন্দরের উপর নির্মিত উন্নয়নমূলক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পবিত্র কুরআন তেলওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠ শেষে আলোচনা অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব কালাচাঁদ সিংহ। পরে অনুষ্ঠানের সভাপতি মোঃ শাহীনুর আলম, পরিচালক (প্রশাসন), বিশেষ অতিথি কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার, সদস্য (হারবার ও মেরিন) ও প্রধান অতিথি বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন “এক সময়ের লোকশানী বন্দর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেন, যার ফল শ্রুতিতে মোংলা বন্দর এখন জাহাজ আগমনে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে, বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক দূরদর্শিতায় অচিরেই মোংলা বন্দর শিপিং হাব এ রুপান্তর হবে।”
বন্দরের সেরা কৃতত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রেস্ট ও সম্পাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ও সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে কয়েকজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনেক চড়াই উত্তরাই পেরিয়ে আসা মোংলা বন্দর পদ্মাসেতু চালু হওয়ার সাথে সাথেই বর্তমানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব ঐতিহ্যের ধারক সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত মোংলা বন্দর। এ বন্দর ১৯৫০ সালের ০১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই বছর ১১ ডিসেম্বর পশুর নদীর জয়মনিরগোলে ‘‘দি সিটি অব লিয়নস’’ নামক ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙ্গরের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি এ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তথা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০০১ হতে ২০০৮ অর্থ বছর পর্যন্ত এ বন্দর নানামুখী প্রতিকুলতার কারণে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। বিগত ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ০৭টি জাহাজ ও সম্পূর্ণ অর্থ বছরে ৯৫টি জাহাজ আগমন করে এবং ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে বন্দর ১১ কোটি টাকা লোকসান করে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে মোংলা বন্দর উন্নয়নের জন্য সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে এবং বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে। ফলে ক্রমান্বয়ে মোংলা বন্দর গতিশীল হতে থাকে, যার কারণে প্রতি বছর বিদেশী জাহাজ আগমনের রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
মোংলা বন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলি হলো মোংলা বন্দরের জন্য সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ,মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, মোংলা বন্দরের ২টি অসম্পুর্ণ জেটি নির্মাণ (পিপিপি)।
ভবিষ্যৎ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, আধুনিক কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জয়মনিরগোলে কার ইয়ার্ড নির্মাণ, জয়মনিরগোলে মাল্টি-পারপাস জেটি নির্মাণ, আকরাম পয়েন্টে ভাসমান জেটি নির্মাণ (সমীক্ষায় সুপারিশকৃত হলে), হিরণ পয়েন্ট পাইলট ষ্টেশনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জ্যাফর্ড পয়েন্টে লাইট হাউজ ও ভবন নির্মাণ, নদী শাসন কার্যক্রম গ্রহণ, যাবতীয় সুবিধাদিসহ হ্যালিপ্যাড ও হ্যাঙ্গার নির্মাণ ও হেলিকপ্টার ক্রয়। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ধারকারী জলযান সংগ্রহ. পানি শোধনাগার নির্মাণ (২য় পর্যায়), জয়মনিরগোলে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ (২য় পর্যায়), নেভিগেশনাল এইড সংগ্রহ, ভিটিএমআইএস সম্প্রসারণ। এ বন্দরের বর্তমান ভিশন ও মিশন হিসেবে রয়েছে, দক্ষ, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব আধুনিক বন্দর নির্মাণ। ১৪৫ কিঃমিঃ চ্যানেলের নাব্যতা সংরক্ষণ, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ বান্ধব চ্যানেল নিশ্চিতকরণ, ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের জন্য বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পুরাতন সহায়ক জলযান প্রতিস্থাপন, মেরামত সুবিধা সৃষ্টি ও দক্ষ জনবল।
Leave a Reply