নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্বশুরের সাথে প্রতারণা করে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আদালতে মিথ্যা ও প্রতারণামূলক বয়ান দেওয়ায় জামাইকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছে আদালত। দিনভর আটক থাকার পর শর্তসাপেক্ষে তাকে জামিন দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার খুলনার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক নুসরাত জাহান এ আদেশ দেন। মামলার বাদী মোঃ সরোয়ার শেখ ও বিবাদী জামাই মোজাফ্ফার হোসেনের বাড়ি রূপসা উপজেলার ইলাইপুর গ্রামে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল খুলনার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে ২১৫/২০ নং সোলে মামলার শুনানীর দিন ধার্য ছিল। এ শুনানাীতে বিচারকের অনুপস্থিতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে মামলার শুনানী শুরু হয়। শুনানী চলাকালে বিবাদী মোজাফ্ফার হোসেন আদালতে পূর্বের দেয়া বয়ান বদলে নতুন করে মিথ্যা বয়ান প্রদান করে মামলার বিচারককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা সহ বিচারিক কাজ বিঘ্ন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালায়।
নতুন বয়ানে সে দাবি করে, অন্যের প্ররোচনা ও চাপের পড়ে তিনি উক্ত বয়ান দেন। একই ব্যক্তির আদালতে দাঁড়িয়ে দুই ধরণের বক্তব্য দেয়ায় বিচারক ক্ষুব্দ হয়ে আদালত অবমাননার দ্বায়ে তাকে তাৎক্ষনিক হাতকড়া পরিয়ে কোর্ট হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিকেলে পূর্বের বয়ান ঠিক রাখাসহ শর্ত সাপেক্ষে তাকে জামিন দেন বিজ্ঞ আদালত।
মামলার বাদী সরোয়ার শেখ জানান, মোজাফ্ফার তার আপন জামাই। বেশ কয়েক বছর আগে তাকে ব্যবসার প্রয়োজনে লোন আনার জন্য জাবুসা মৌজার আড়্ইা বিঘা জমি আমমোক্তার নামা মূলে রেজিস্ট্রি করে দেন। পরবর্তীতে জামাই উক্ত জমিতে মাছের ঘের করে করার পাশাপাশি ব্যাংকে মটগেজ রেখে লোন নেয়। এভাবে কয়েখ বছর চলার পর সুচতুর জামাই প্রতারণা করে উক্ত জমি দখলে রাখার উদ্দেশ্যে আমার কণ্যা অর্থাৎ তার স্ত্রীর নামে উক্ত জমি রেজিস্ট্রি বায়নাপত্র সম্পাদন করে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি জমি ফেরত চাইলে জামাই মোজাফ্ফার নানা টালবাহানার পর উক্ত জমি নিজের বলে দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একাধীকবার শালিস বৈঠক হলেও সে জমি ফেরত দিতে অনীহা প্রকাশ করে।
এপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি। মামলার শুনানী চলাকালে মোজাফ্ফার কিছু আর্থিক সুবিধা নিয়ে জমি ফেরত দিতে সম্মত হয়। সে মোতাবেক ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতের ধার্য তারিখে বাদি-বিবাদী ৮৯/এ ধারায় সোলেনামায় স্বাক্ষর এবং বিবাদী মোজাফ্ফার আদালতে বয়ান প্রদান করেন।
উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত সলেনামায় উল্লেখ করা হয়, বাদী অত্র মোকদ্দমা আপোষের স্বার্থে ১ নং বিবাদীকে নগদ এককালিন ৩৫,০০,০০০/- (পঁয়ত্রিশ লাখ) টাকা প্রদান করিলেন এবং ১নং বিবাদী উক্ত টাকা প্রাপ্ত হয়ে অত্র সোলেনামায় সহি স্বাক্ষর করলেন।
অত্র মোকদ্দমার “খ” তপশীল বর্ণিত নালিশী জমি বাবদ ১ নং বিবাদীর নামীয় বাদী কর্তৃক সম্পাদিত ও রেজিষ্ট্রীকৃত ইং ১৮/০৯/১৪ তারিখের ২২৩৮ নং বায়নাপত্র ও ১ নং বিবাদীর স্ত্রীর নামীয় ইং ২৮/০৫/২০০৯ তারিখ ১০৩৫ নং আমমোক্তারনামা দলিল বাতিল বলে গন্য হবে ও ভবিষ্যতে উক্ত দলিল দু’টি বুনিয়াদে ১ নং বিবাদী নালিশী জমি সংক্রান্তে বাদী বা তার মাধ্যমে দাবীদার কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আইনগত প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারবেন না, করলে তা সর্বত্র বাতিল বলে গন্য হবে।
১ নং বিবাদীর অত্রাদালতে নালিশী জমি বাবদ তর্কিত দেঃ ১৩৬/১৬ নং মোকদ্দমার রায় ডিক্রী বাবদ দাখিলী দেঃ জারী ১/২০ নং মোকদ্দমাটি ১ নং বিবাদী আর চালাবেন না, তা না চালানো হেতু খারিজ হবে। যা সোলেকারী ১ নং বিবাদী স্বীকার ও অঙ্গীকার করিলেন। এরকম আরো বেশ কিছু শর্ত থাকে সোলেনামায়।
পরবর্তীতে গত ১৯ জানুয়ারী বিবাদী মোজাফ্ফার তার পূর্বের বয়ান ও সোলেনামা প্রত্যাহারের আবেদন করে। ওই তারিখের আদালতে সোলেনামার আপত্তি সংক্রান্ত বিষয়টি গোপনীয়ভাবে দাখিল করায় গতকালের আদালতে উত্থাপিত হলে বিবাদী মোজাফ্ফার মিথ্যা বয়ান দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়।
উল্লেখ্য, উক্ত মোজাফ্ফার হোসেন লোকায় ভূমিদস্যু হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিভিন্ন অসহায় মানুষের জমি সে নানা কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। যা নিয়ে আদালতে একাধীক মামলা রয়েছে।
আরো খবর পড়ুন>>
Leave a Reply