শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন
গোলাম মোস্তফা ঃ বাংলাদেশে গনমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন বেশ ঝুকিপূর্ন। রিপোটার্স উইথ আউট বর্ডার এ আন্তজার্তিক সংস্থার তথ্য অনুসারে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে স্বাধীন গনমাধ্যমের অবস্থান ১৬৫তম, এ তথ্য বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে তা সুষ্পষ্ট।
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত চার বৎসরের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে আট জন গনমাধ্যম কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এর অধীনে ২৮০ জন সংবাদ কর্মীকে অভিযুক্ত করে ১৩৮ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময়ে ৮৪ জন সংবাদকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ২০২৩ সালে ফেডারেল সাংবাদিক তথ্য অনুসারে চার জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২৯২ জন সাংবাদিক নির্যাতন হয়রানি মামলার শিকার হয়েছেন। অন্য সুত্রে জানা গেছে এসময়ে ৫৬িিট মামলা হয়েছে সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে। আইন সালিশ কেন্দ্রের সুত্র জানায় ২০২৪ সালে ১৪৫ জন সাংবাদিক নির্যাতন হয়রানী মামলার শিকার হয়েছেন।
জুলাই আগষ্ট কোটা বিরোধী আন্দেলনে দেশব্যাপি চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন ২১৮জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন,সাংবাদিকদের আটটি গাড়ী পোড়ানো হয়েছে ও ৩৮টি যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে। সুত্র আরও জানায় ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৬ জন সংবাদ কর্মী হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগষ্ট পরবর্তী সময়ে দেশে মফস্বল সাংবাদিকরা হত্যা হুমকি ও মামলা শিকার হয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক ট্যাগ প্রদান করায় এখনো তথ্য সংগৃহিত হয়নি। এ বৎসর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১৬৭জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে।
দেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করছে যে কয়টি সংগঠন তাদের মধ্যে অন্যতম বিএফইউজে, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সাংবাদিক অধিকার ফোরাম, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, আইন সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম সহ আঞ্চলিক প্রেস ক্লাব সমুহ। দেশে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমুহের মধ্যে কাজ করছে রিপোটার্স উইথ আউট বর্ডারস, ইউনেস্কো- ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর দ্যা ডেভালপমেন্ট কমিউনিকেশন, সেন্টার ফর ল এন্ড ডেমোক্রেসি, সাউথ এশিয়ান প্রেস এলায়েন্স, কোয়ালিশন উইমেন এন্ড জার্নালিজম, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর প্রেস এন্ড মিডিয়া জার্নালিজম।
দেশে অনুসন্ধানী সাাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সরকার সহ অন্যন্য স্টেক হোল্ডাররা বাধা প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । সাংবাদিক সাগর, রুনি হত্যা মামলা, রোজিনা ইসলাম, আফরোজা সরকার, এস এম মোরশেদ, ইজাজ রহমান, বশির আকন, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, আদিলুর রহমান, নাছিরউদ্দিন এ সকল মামলার পরিনতির কথা সবাই জানে। সর্বশেষ সাতক্ষীরার কালের কন্ঠের সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুকে ইউএনও রাসেল নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যাবহার করে জেল প্রদান করেন, একই ধরনের কাজ করেছন শেরপুরের এক ইউএনও সাদিয়া তিনিও তথ্য চাওয়ার অপরাধে দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে জেলে পাঠিয়েছেন।
পৃথিবীর ১৮০টি দেশের মধ্যে স্বাধীন গনমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম, এ তথ্য বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে যেমন হুমকির মুখে ফেলেছে তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গনতন্ত্র চর্চার সুচক আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গনমাধ্যম আশার আলো দেখতে পেয়েছে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিল করেছে। তাই আজ শুধু সাংবাদিকদেরই নয় দেশের মানুষের প্রত্যাশা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা। দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য যে পাচটি উপাদান জরুরী তাহলো শক্তিশালী সাংবাদিক সংগঠন, প্রশিক্ষিত বা পেশাদ্বারিত্বের সাংবাদিকতা, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা, বীমা ও গনতান্ত্রিক পরিবেশ। সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিশন নির্বাচন পূর্ব পরিবেশ সৃষ্টিতে সে লক্ষেই কাজ করে চলেছে। এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা সরকারের আন্তরিকতা প্রকাশ পেলেই শক্তিশালী হবে গনমাধ্যম। আর গনমাধ্যম শক্তিশালী হলেই রাজনীতি ও গনতন্ত্রের সুচকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।